স্টাফ রিপোর্টার সাদি
২০ আগস্ট
সিলেট বিভাগের ভূমি মালিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেবা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের প্রেস ঢাকায় স্থানান্তরের পায়তারা চলছে—এমন অভিযোগে সিলেটজুড়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সিলেটের সর্বস্তরের ভূমি মালিকদের ব্যানারে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।বুধবার (২০ আগস্ট) সকাল ১১টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন মদনমোহন কলেজের সাবেক অধ্যাপক পীর হাবিবুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক প্যানেল মেয়র জননেতা রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী। এছাড়া সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাসেম, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাজী জাহেদ আহমদ, সদর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মইন উদ্দিন আহমদ, কৃষক দলের আহ্বায়ক তমিজুল ইসলাম, মহানগর জিসাসের সদস্য সচিব সাব্বির হোসেন জামিল, জেলা জিসাসের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন নাসিরসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, জামায়াত নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ভূমি মালিকগণ উপস্থিত ছিলেন।কয়েস লোদী বলেন, “আমাদের না জানিয়ে প্রেস ঢাকায় নেয়ার চেষ্টা প্রতারণার শামিল। বাকী মৌজাগুলোর কাজ শেষ হওয়ার পরই অন্য কিছু ভাবা যেতে পারে। অন্যথায় সিলেটবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।” তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ৭ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা হলে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস ঘেরাও ও লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।প্রধান বক্তা এমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, সিলেট প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। প্রবাসীরা অল্প সময়ের জন্য দেশে এসে খতিয়ান সংশোধন করেন। প্রেস ঢাকায় গেলে এই প্রবাসীসহ সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বেন।সভাপতি পীর হাবিবুর রহমান বলেন, “২০১২ সালে সিলেটে প্রেস স্থাপন হওয়ার পর জরিপ কাজ দ্রুত এগিয়েছে। এখনো মাত্র ৫০-৬০টি মৌজার ছাপার কাজ বাকি। প্রেস সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।”প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১২ সালে স্থাপিত এই প্রেসের মাধ্যমে সিলেট বিভাগের চার জেলার খতিয়ান দ্রুত ছাপা হচ্ছে। এতে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা কমেছে, প্রবাসীরাও দ্রুত সেবা পাচ্ছেন। তবে অভিযোগ উঠেছে, সাবেক জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার কাজী মাহবুব উর রহমান অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে ঢাকায় স্থানান্তরের প্রস্তাব দেন। যদিও তাকে ইতোমধ্যেই স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।মানববন্ধনে বক্তারা আরও জানান, প্রেস ঢাকায় চলে গেলে গুরুত্বপূর্ণ মৌজাগুলোর কাজ, বিশেষ করে সিলেট মিউনিসিপ্যালিটি মৌজা যেখানে শাহজালাল (র.) এর মাজার ও সরকারি অফিস আদালত অবস্থিত, তা আরও দীর্ঘমেয়াদি জটিলতায় পড়বে। প্রায় ১৫ হাজার ভূমি মালিকের সম্পত্তি ইতোমধ্যেই একটি রিট মামলায় ঝুলে আছে।অতিরিক্ত জিপি অ্যাডভোকেট তাজ রীহান জামানও বলেন, প্রেস স্থানান্তর ভূমি মালিকদের সেবা থেকে বঞ্চিত করবে। ভূমি মালিক ফয়েজ আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ছাপা খতিয়ান হাতে না পাওয়া পর্যন্ত সিলেট থেকে প্রেস সরাতে দেয়া হবে না।”এদিকে বিষয়টি সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরকেও অবগত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।সার্বিকভাবে মানববন্ধনে বক্তারা একমত হন যে, প্রেস স্থানান্তরের আদেশ বাতিল না হলে সিলেটবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।