স্টাফ রিপোর্টার সাদি
১৮ নভেম্বর
সিলেটের রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী ধর্মভিত্তিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ আঞ্জুমানে আল ইসলাহ (আল-ইসলাহ)-এর ১৯টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা এই অঞ্চলের প্রধান বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনী হিসাব-নিকাশকে সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দিয়েছে। এই পদক্ষেপ সরাসরি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভোট কৌশলকে লক্ষ্য করে এক বিশাল চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।
১. ধর্মীয় ভোটের দুর্গ দখল: আল-ইসলাহ’র কৌশলগত উত্থান
আল-ইসলাহ’র মূল শক্তি হলো স্বনামধন্য পীর, শামসুল উলামা হযরত আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী (রহ.)-এর বিশাল ভক্ত ও অনুসারী গোষ্ঠী। ১৯টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত এই শক্তিকে নির্বাচনী মাঠে সরাসরি প্রয়োগ করার একটি কৌশল:
জামায়াতের ভোটের ওপর মারণাঘাত: সিলেট অঞ্চলে ধর্মভিত্তিক ভোটের একটি বড় অংশ ঐতিহ্যগতভাবে জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু আল-ইসলাহ’র সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সেই ভোট ব্যাংকটি প্রবলভাবে বিভক্ত হবে। জামায়াতের প্রার্থীরা কোনো আসনেই জয়লাভের আশা রাখতে পারবে না, যা তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে পরাজয়ের ভীতিকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এই ভীতিই এখন জামায়াতকে আল-ইসলাহ'র বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনামূলক অবস্থান নিতে বাধ্য করছে।
বিএনপি'র দ্বিধা ও জোটের সংকট: বিএনপি মূলত জামায়াত এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে ধর্মীয় ভোটকে একত্রিত করার চেষ্টা করে। এখন আল-ইসলাহ’র উত্থানে বিএনপি উভয় সংকটে। একদিকে জামায়াতকে ধরে রাখা কঠিন, অন্যদিকে আল-ইসলাহ’র বিপুল সংখ্যক অনুসারীর ভোটকে উপেক্ষা করা অসম্ভব। বিএনপিকে এখন হয় আল-ইসলাহ'র সঙ্গে ব্যাপক সমঝোতা করতে হবে, নতুবা ভোট বিভাজনের চরম মূল্য দিতে হবে।
আদর্শিক সংঘাতের বিস্ফোরণ: জামায়াত আল-ইসলাহ’কে লক্ষ্য করে আদর্শিক সমালোচনার বিস্ফোরণ ঘটাবে, যাতে তাদের নিজস্ব কর্মী বাহিনী হতাশ না হয়। জামায়াত যুক্তি দেবে যে আল-ইসলাহ'র রাজনীতি ক্ষমতার সুবিধা আদায়কেন্দ্রিক, বিশুদ্ধ ইসলামী আন্দোলন নয়।
২. ভোটের পাটিগণিতে আমূল পরিবর্তন
আল-ইসলাহ'র প্রার্থীরা নির্বাচনের ফলাফলকে নিম্নলিখিত উপায়ে প্রভাবিত করবে:
আসন সংখ্যা
মূল প্রভাব
ফলাফল
১৯টি আসন
ত্রিমুখী বা চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা: ঐতিহ্যবাহী প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরে একটি নতুন শক্তিশালী ফ্যাক্টর তৈরি হবে।
প্রার্থীরা তুলনামূলকভাবে কম ভোট পেয়েও জয়ী হতে পারেন, যদি বিরোধী ভোটগুলো (বিএনপি, জামায়াত, আল-ইসলাহ) সমানভাবে ভাগ হয়ে যায়।
সিলেট-৫
ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু: এই আসনটি আল-ইসলাহ এবং জামায়াতের মধ্যে আদর্শিক ও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রতীক হয়ে উঠবে।
জামায়াতের সমর্থন হারানো বিএনপি’র পক্ষে এই আসনটি ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে, যদি না তারা আল-ইসলাহ'র সঙ্গে চুক্তি করে।
আল-ইসলাহ’র লক্ষ্য
আলোচনা ও দর কষাকষি: তাদের মূল লক্ষ্য সমস্ত আসনে জয়লাভ নয়, বরং কমপক্ষে ৩-৪টি আসনে জয়ী হওয়া এবং বিএনপি জোটের কাছ থেকে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করা।
আল-ইসলাহ নির্বাচনে তাদের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থানকে সুসংহত করবে।
৩. সিলেটের রাজনৈতিক মঞ্চে নয়া 'কিং-মেকার'
আল-ইসলাহ’র ১৯টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত সিলেটের রাজনৈতিক মঞ্চে তাদেরকে এক নতুন 'কিং-মেকার' শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে। এই পদক্ষেপ শুধু জামায়াতে ইসলামীর কর্মী-সমর্থকদের মনে পরাজয়ের ভীতিই সৃষ্টি করেনি, বরং বিএনপিকেও তাদের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে গভীর সংকটে ফেলেছে। চূড়ান্ত নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, আল-ইসলাহ’র এই উত্থান বৃহত্তর সিলেটের রাজনৈতিক সমীকরণকে দীর্ঘমেয়াদে পরিবর্তন করে দেবে।

